মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীমঃ
প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ভয় দেখাত গরুর হাট খাস কালেকশান হলে বন্ধ হবে মাদ্রাসা। মাদ্রাসার অযুহাতে নামমাত্র কমিটি দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাটটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল তারা।
অবশেষে সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় পশুর হাট নৈহাটি। প্রতি সোমবার বসা গরুর হাটটি ৫ আগস্টের পর প্রভাবশালী মহলের সিন্ডিকেটের হাত থেকে খাস কালেকশনের আওতায় আনা হয়।
হাটটি অবৈধ দখলদারমুক্ত হওয়ায় শুধু এই একটি হাট থেকেই প্রতি সপ্তাহে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা। মাসে তা ৩৬ লাখ এবং বছরে তা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাছাকাছি।
সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন সমস্ত ব্যয় বহন করছে হাট সংশ্লিষ্ট নৈহাটি মাদ্রাসার। মাদ্রাসা ঠিকঠাক চলার পাশাপাশি কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে সরকার।
এর আগে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ওয়াক্ফ এস্টেট ও মাদ্রাসাকে সাহায্যের নামে নৈহাটি বাজারের পাশে চিরাম মৌজায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ৩০-৪০ বছর ধরে গরুর হাট পরিচালনা করে আসছিলেন। এ নিয়ে মামলা হলে তারা বাজারটিকে নৈহাটি মৌজায় সরিয়ে নেয় ও টোল কালেকশনের নামে চাঁদা আদায় অব্যাহত রাখেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ ও আদালতে মামলার পরও তাদের দখলমুক্ত করা যায়নি বাজারটি। প্রতি সোমবার হাট বসানো হতো এখানে।
এই হিসাবে বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি আয় করত অবৈধ দখলদাররা। সর্বশেষ আওয়ামী সরকারের পতনের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হাটটি দখলমুক্ত করে খাস কালেকশানের আওতায় আনেন বারহাট্টা উপজেলার সাবেক ইউএনও ফারজানা আক্তার ববি।
এতে বড় অঙ্কের রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। সারা দেশ থেকে হাটে গরু ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসা লোকজন খুশি হাটটির আসিল নিয়ে। হাটিটিতে গরু নিয়ে গেলে ক্রেতাকে মাত্র ২০০ এবং বিক্রেতাকেও মাত্র ২০০ টাকার আসিল দিতে হয়। এত কম টাকা আসিল হওয়ার কারণে নৈহাটি গরুর হাটটির পরিচিত সারা দেশ জুড়ে।
হাটটিতে পঞ্চগড়, রাজশাহী, সিলেট, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লালমনিরহাট, ঢাকাসহ সারা দেশের পাইকাররা আসে।
আজ ২ জুন হাটটি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা থেকে আসা একজন পাইকারের সাথে দেখা হয়। এত দূর থেকে কেন আসলেন ? এমন প্রশ্নে ওই লোক বলেন, নৈহাটি গরুর হাট থেকে গরু নিয়ে ঢাকার বাজার গুলোতে ভালো লাভ করা যায়। তাই আমি এবার দুটি ট্রাক নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছি। ঈদ উপলক্ষে দুই ট্রাক গরু নিব। আশা করি লাভবান হব। তবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে বাজারের সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন তিনি।
বারহাট্টা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুল হাসান বলেন, নৈহাটি গরুর বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী গরুর হাট। ঈদ হাট উপলক্ষে যাতে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই থানা পুলিশের টিম বাজারটিতে উপস্থিত আছে। আমি নিজেও উপস্থিত আছি। আশা করি কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খবিরুল আহসান বলেন, নৈহাটি গরুর বাজারটিতে খাস কালেকশান নিয়ে এখন আর কোন সমস্যা নেই। তবে নৈহাটি গরুর বাজারটি অনেক বড় বাজার হওয়ায় খাস কালেকশান করতে অনেক বেশি লোকবলের প্রয়োজন হয়। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে বাজারটিকে ইজারা দেওয়ার। তিনি আরও জানান বাজারটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করায় সরকারের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় বাড়ছে ঠিক তেমনি সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসাটিও সঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে।