মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম, স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:
নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৫টি রবিদাস পরিবারকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, বসতঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং সশস্ত্র হামলার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ভূক্তভোগীদের স্থায়ী আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)’ ও ‘নাগরিক উদ্যোগ’।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে নেত্রকোণা জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিডিইআরএম-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নেত্রকোনা জেলা শাখার সভাপতি নন্দলাল রবিদাস (মাস্টার)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পূর্বধলা উপজেলার জালশুকা বাজার সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী ৫টি রবিদাস পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নারী ও শিশুসহ অন্তত ২২ জনকে মারধর ও জখম করে। ঈদের আগের দিন (৬ জুন), ঈদের পরদিন (৮ জুন) এবং ১০ জুন—এভাবে তিন দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। লুটে নেওয়া হয় গচ্ছিত অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সুনীল রবিদাস বলেন, “আমরা প্রায় ৫০ বছর ধরে সরকারি খাসজমিতে বসবাস করছি। জমিটি পৈত্রিক সূত্রে দাবি করলেও তার পক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি অভিযুক্তরা। আমরা শুধু নিরাপদে বেঁচে থাকতে চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক রবিন রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস ছাত্র ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এস. স্বাধীন চন্দ্র রবিদাসসহ ভুক্তভোগী পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য।
সংগঠনের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ভুক্তভোগী ৫টি রবিদাস পরিবার উচ্ছেদের অপচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করা, একই স্থানে স্থায়ী আবাসনের (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত) ব্যবস্থা করা, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জীবিকার অধিকার নিশ্চিতে সরকারি সহায়তা প্রদান, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও সার্বিক নিরাপত্তা বিধান।
বক্তারা বলেন, “এই হামলা শুধু কিছু পরিবারের বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র। আমরা সরকারের কাছে মানবিক ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজকে পাশে থাকার আহ্বান জানান, যাতে রবিদাস পরিবারের কণ্ঠ রোধ না হয় এবং তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষিত হয়।