নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শুরুটা হয়েছিল এক নিভৃত গ্রামে। নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের বাগড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এক স্বপ্নবাজ তরুণ আজ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে কেবল নিজের নয়, উজ্জ্বল করেছেন পুরো জেলার মুখ।
তিনি মো. আমিনুল ইসলাম — ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় যিনি প্রশাসন ক্যাডারে সারাদেশে ২৫০ জন সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৯ তম হয়ে একজন আদর্শ সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ওঠার পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে গেছেন।
তার পিতা তাজুল ইসলাম তার ছোটকালেই মারা যান। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি এক অনমনীয় ভালোবাসা ছিল তাঁর। কঠোর অধ্যবসায়, আত্মপ্রত্যয় এবং নিয়মানুবর্তিতা ছিল তাঁর পথচলার পাথেয়। যার স্বাক্ষর পাওয়া যায় শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে নেত্রকোণা সদর উপজেলার বাগড়া ফাযিল স্নাতক মাদ্রাসা থেকে দাখিলে বোর্ডে প্রথম এবং আলিমে সপ্তম স্থান অর্জন করেন আমিনুল।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন, সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যথাক্রমে ৩.৭২ ও ৩.৬৭ GPA অর্জন করে নিজের মেধার পরিচয় আরও একবার তুলে ধরেন।
তবে আমিনুলের গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এর আগেও তিনি সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিসিএস, দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা — সরাসরি মানুষের কাছে গিয়ে, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থার অংশ হয়ে।
বর্তমানে তিনি কুমিল্লার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এ সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত। ২০২২ সালের জুলাই মাসে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যোগ দেন তিনি। সরকারি নীতি বাস্তবায়ন ও পল্লী উন্নয়নে তাঁর কাজ ইতিমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে।
এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কার? প্রশ্ন করতেই বিনীত আমিনুল বলেন, “আমার মা। তাঁর দোয়া ছাড়া আমার এই পথচলা সম্ভব হতো না। আর অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাই আমার শিক্ষকদের, যারা প্রতিটি ধাপে আমাকে আলোর পথ দেখিয়েছেন।”
তাঁর সহপাঠী ও সহকর্মীরা বলেন, আমিনুল ইসলাম সবসময়ই ছিলেন পরিশ্রমী, সংযত ও দূরদর্শী। তাঁর এই অর্জনে তাই কারো অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এলাকাবাসীর আশা, তিনি যেন ভবিষ্যতে একজন জনবান্ধব ও দক্ষ প্রশাসক হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। নেত্রকোনার বাগড়া গ্রাম থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্র পর্যন্ত এই যে অভিযাত্রা — তা নিঃসন্দেহে আজকের তরুণদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম।
“স্বপ্ন দেখুন, তারপর সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হোন” — এই কথাটির জীবন্ত উদাহরণ যেন মো. আমিনুল ইসলাম।