নেত্রভয়েস অনলাইন ডেস্ক :
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রদের ওপর নৃশংস হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপের রেকর্ড সামনে এনেছে আল-জাজিরা।
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়েছে আল-জাজিরা ইংরেজির ইউটিউব চ্যানেলে। ৯ জুলাই ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি শেখ হাসিনার একটি ফোন রেকর্ড নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
‘হাসিনা—থার্টিসিক্স ডেইজ ইন জুলাই’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ছাত্রলীগ নেতা ওয়ালিদ আসিফ ইনানের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। আল-জাজিরা জানায়, কলটি ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৫৫ মিনিটের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোন কলটি শেখ হাসিনার নিজের গোয়েন্দা সংস্থাই রেকর্ড করেছিল। ফোন কলটির ডিজিটাল ফরেনসিক এনালাইসিসের মাধ্যমে যাচাই করে সত্যতা পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে আল-জাজিরা উল্লেখ করেছে।
ফোনালাপে শেখ হাসিনার ‘কী অবস্থা তোমাদের?’ প্রশ্নে ওয়ালিদ আসিফ ইনানকে বলতে শোনা যায়, ‘ক্যাম্পাসের অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ছেলেদের হল, মেয়েদের হল—অধিকাংশই ফাঁকা হইছে। তবে এরপরও ভেতরে পুলিশের সার্চ করতে হবে। আমাদের দলীয় সিনিয়ররা অনেকেই প্যানিক হয়ে যাচ্ছিল। মানে কী করব ডিরেকশন দিতে পারছিল না, এই জন্য আপনারে বারবার ফোন দিছি। আপনে কিছু মনে কইরেন না।’
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, আমি কেন মনে করব, আমি সেদিন সারা রাতই জাগা। কালকেও তো। দক্ষিণে-উত্তরে বলে দিছি, হ্যাঁ যা দরকার, আমি তো বলে দিছি। হ্যাঁ, আমাদের নেতারা ঘাবড়ায়া যায়।’
এরপরে আবার ওয়ালিদ আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিল। মাঠে ছিল। আপনার নির্দেশনা পাইয়াই সবাই নাইমা গেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠলে শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন আক্রমণাত্মক। এ সময় তাঁর একটি বক্তব্য শিক্ষার্থীদের আরও বিক্ষব্ধ করে তুলে।
প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কোটাব্যবস্থা ছিল যুক্তিহীন, অর্থহীন এবং তরুণদের জন্য এতটাই ক্ষতিকর যে প্রত্যেকেই এটিকে ঘৃণা করতো। তবে এটি যে পুরো শাসনব্যবস্থার পতন ডেকে আনবে তা বোঝার উপায় ছিল না।
ছাত্রনেতা আবু সাদিক কায়েম বলেন, শেখ হাসিনা ‘রাজাকার’ বলে গত ১৫ বছর ও তার আগেও পুরো জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার রাজনীতির মূল বয়ান হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভাবতেন, এদেশের স্বাধীনতা তাঁর বাবা এনেছেন, এই দেশ তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। তিনি ভাবতেন, এই দেশ তাঁর রাজতন্ত্র।’
ঢাকায় এএফপির সাবেক ব্যুরো প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর ১৫ বছরের বক্তৃতাগুলো দেখুন, প্রায় প্রতিদিন প্রতিটি বক্তৃতায় তৃতীয় বা চতুর্থ প্যারায় তাঁর বাবা-মায়ের হত্যাকাণ্ড ও তাঁর পরিবারের ত্যাগের কথা বলতেন। তিনি ভেবেছিলেন, দেশ স্বাধীন করা তাঁর জন্মগত অধিকার।’