মোঃ হাবিবুল্লাহ, খালিয়াজুরী প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোনার হাওরবেষ্টিত উপজেলা খালিয়াজুরীতে প্রায় এক বছর আগে কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি এখনও চালু হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিপূর্ণ এই উপজেলায় আধুনিক ফায়ার স্টেশন থাকলেও কার্যক্রম না থাকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে মানুষ কবে সেবা পাবে?
খালিয়াজুরী উপজেলা ১৯০৫ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রায় ১২০ বছর পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৩ কোটি ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৩৭ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্টেশন ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়, নিয়োগ হয় ২০ জন জনবল— স্টেশন অফিসার, সাব-অফিসার, লিডার, স্পিড বোট চালক, ডুবুরি, ফায়ার ফাইটার, ড্রাইভার, বাবুর্চি ও ঝাড়ুদারসহ।
তবে উদ্বোধনের পরিবর্তে স্টেশনটি পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। জনবল অন্যত্র কর্মরত, নেই কোন নিরাপত্তাকর্মী বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও স্টেশনটি এখনও ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেয়া হয়নি। মূলত রাস্তা সংযোগ ও অবকাঠামোগত কিছু ঘাটতির কারণেই এটি চালু হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ স্বাধীন, উপজেলা জামায়াতের আমির মো. ইসমাইল হোসেন এবং বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান কেষ্টু যৌথভাবে বলেন, “এ স্টেশন চালু হলে খালিয়াজুরী তথা হাওরাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। আমরা দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।”
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, “ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত রাস্তার সমস্যা ছিল। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেই রাস্তা করে দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুতই স্টেশনটি চালু হবে।”
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, “কিছু সমস্যা ছিল, যা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে দ্রুত চালুর নির্দেশ দিয়েছি।”
নেত্রকোনা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “নির্মাণকাজ শেষ হলেও ঠিকাদার এখনও হস্তান্তর করেননি। মূল সমস্যাটি রাস্তাঘাট নিয়ে। জনবল থাকলেও স্টেশন ব্যবহার করা যাচ্ছে না।”
ময়মনসিংহ বিভাগের ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “স্টেশনে পৌঁছাতে মেইন রোড থেকে যে সংযোগ রাস্তা রয়েছে, সেটি এখনো পাকা হয়নি। দেয়াল না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকিও রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলেই স্টেশনটি চালু হবে।”
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ হলেও কেন আগে থেকেই রাস্তার ব্যবস্থা ও অবকাঠামো পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের অভিযোগ, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কাজ নেই। এটি কর্তৃপক্ষের অবহেলা না কি পরিকল্পনার ব্যর্থতা?”
ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি দ্রুত চালু করে জনসেবার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন হাওরের সাধারণ মানুষ।