মোহনগঞ্জ সংবাদদাতা:
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, ও নার্সসহ জনবল সংকটের কারণে হাওরবাসীর রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারী সংকটে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটি পার্শ্ববতী সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলা উপজেলা-ও নেত্রকোনার জেলার কয়েকটি উপজেলার ৭/৮ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগীদের ছুটতে হয় জেলা সদরসহ ময়মনসিংহ হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২১ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থাকলেও আবাসিক কর্মকর্তাসহ রয়েছেন মাত্র ৪ জন। পর্যায়ক্রমে তাদের দিয়ে জরুরি ও অন্তঃবিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন ২ জন চিকিৎসক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য এসেসমেন্টে অন্যন্ত্রে রয়েছেন ১ জন। নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে রয়েছেন ১ জন। এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীর অবস্থা জটিল অজুহাতে রোগীদের রেফার্ড করা হচ্ছে নেত্রকোণা কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আয়া,ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট রয়েছে।
গত সোমবারে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪ শ থেকে ৫শ জন,জরুরি বিভাগে ১শ জন ও অন্ত বিভাগে রোগী ভর্তি হয়েছে ৪০ জন। ছুটি নিয়েছে ৩২ জন। প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি আছে ৭৭ জন। কিস্তু চিকিৎসক না থাকায় বিপুলসংখ্যক রোগীকে কতৃপক্ষ দায় এড়াতে অন্যত্রে রেফার্ড করছেন। অন্যদিকে রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
আজ ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকেই।
উপজেলার ৬নং সুয়াইর ইউনিয়নের কুলপুতাক গ্রাম থেকে আসা রোকেয়া আক্তার (৩৫) তার মেয়ের গুরুতর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। অবশেষে হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না পেয়ে সন্ধায় প্রাইভেট একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
হাসপাতাল নার্স ও স্থানীয় সূত্রে, মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি হাওর বেষ্টিত খালিয়াজুড়ি,
বারহাট্রা, কারমাকান্দা, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, তাহেরপুর, জামালগঞ্জ -সহ অদূরে মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবস্থান হওয়ায় এই হাসপাতালটির গুরুত্ব অনেক বেশি। ছোট-বড় দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য আহতদের এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের পাঠানো হয় নেত্রকোণা কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে। এতে পথেই অনেক সময় রোগীর মৃত্যু ঘটে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মোমেনুল ইসলাম বলেন, আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। পোস্ট হিসাবে ২৮ জন। ২১ জন চিকিৎসকের মধ্যে সব মিলিয়ে ৪ জন আছে। তাদের দিয়ে জরুরি ও অন্তঃবিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য এসেসমেন্টে অন্যন্ত্রে রয়েছেন ১ জন। নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে আছেন ১ জন। সবগুলো সার্পোট থাকলে আরও ভাল চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো। যেমন: ডাক্তার, নার্স,স্টাফ যদি যথাযথ পরিমাণে থাকতো। তাহলে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে তা প্রয়োগ করে। চিকিৎসা সেবার মান আরও বৃদ্ধি করা যেতো।
জরুরী বিভাগে রোগী সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বেশি থাকে। মেডিকেল অফিসার না থাকায় মূলত উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা সেবা দিয়ে থাকেন। একজনের পক্ষে সেবা দেওয়া খুব কঠিন কাজ। জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তারা হিমশিম খেতে হয়। তাদের মোবাইল চুরে নিয়ে গেলেও বলতে পারেন না। প্রতিনিয়তই ২০/৩০জন রোগী আত্মীয়-স্বজন মিলে জরুরী বিভাগ ভরপুর থাকে। মোহনগঞ্জের গুরুত্ব বিবেচনা করে জরুরী বিভাগে নিয়মিত একজন মেডিকেল অফিসার ও দুইজন উপ সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন।