নেত্রকোণা প্রতিনিধি:
নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর কিশোরী পান্নাকে গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার রায়ে তিন যুবকের মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও একলক্ষ টাকা অর্থ দন্ড, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
নেত্রকোনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ডক্টর এ কে এম এমদাদুল হক আজ সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক উপ সম্পাদক কৌশিক চন্দ্র সরকার ওরফে অপু (২৩), যুবলীগ কর্মী মামুন আকন্দ (২৬) ও সুলতান মিয়া (৩০)।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ, বিগত ২০১৭ সনের ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঠাকুরাকোনা রেলের পাশে থাকা রিক্সা চালক লাল চান মিয়ার ১৪ বছরের কিশোরী পান্নাকে ডেকে নিয়ে পাশের সুলতানের ফিশারির ঘরে গণধর্ষণ করে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলেও মেয়েকে না পেয়ে মা আল্পনা আক্তার সহ অন্যরা সুলতানের খামারের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে পান্নাকে উদ্ধার করে।
এরপর রাতেই ধর্ষণকারীরা ভিকটিমের পরিবারের ঘরে গিয়ে বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলে, অন্যথায় তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় রাগে ক্ষোভে অপমানে পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর সকালে কিশোরী পান্না আত্মহত্যা করে। দুপুরে পরিবারের লোকজন পাশের আরেকটি পরিত্যক্ত খালি ঘর থেকে পান্নার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় পান্নার মা আল্পনা আক্তার বাদী হয়ে তিন জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করলেও আসামীরা তৎকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এটিকে নিছক আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় এবং দ্রুত দাফন করতে বাধ্য হয় পরিবারটি। কিন্তু ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পরে আদালতে আবেদন করে আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে ১০ সেপ্টেম্বর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের পর পুনরায় লাশ দাফন করা হয়।
পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর আসামি কৌশিক ও মামুনকে আটক করে। পরে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীঃ অনুযায়ী মামলাটি পুনরায় ফাইল হয়। এরপর তিন নম্বর আসামী খামার মালিক সুলতান মিয়াকেও আটক করে পুলিশ। এদিকে আসামিদের পরিবার ও তাদের আত্মীয় স্বজনের হুমকি ধামকির কারনে কিশোরী পান্নার পরিবার বাড়িঘর ছাড়া অন্যত্র পালিয়ে থাকে।
এদিকে এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও সদর থানার ওসির প্রত্যাহারের দাবীতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মিছিল মিটিং ও মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানায়।
পুলিশ ১৮ সনের ৫ এপ্রিল তিনজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৬ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণান্তে আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক উক্ত রায় দেয়। রায় ঘোষণাকালে তিন জন আসামিই উপস্থিত ছিলেন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আসামিদের উপযুক্ত সাজা প্রদান করায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ও পান্নার মা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।