জায়েদ হাসান, মোহনগঞ্জ:
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর মাঘান সিয়াধার ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খুরশিমূল উচ্চ বিদ্যালয়টি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভবন সংকট, ওয়াশরুম ও বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ নানা দুর্ভোগে দিন কাটছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।
ডিঙ্গাপোতার হাওরের পাড়ঘেঁষে স্থাপিত এই প্রাচীন বিদ্যালয়টি প্রায় ৭০ বছরের ইতিহাস বহন করছে। এখানকার বহু শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। তবে বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়টির সংকটময় অবস্থা পাঠদানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা মিলিয়ে ৮৭ জন শিক্ষার্থী বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বিদ্যালয়টিতে একটি মাত্র পুরনো ভবনে অফিস ও ক্লাস কার্যক্রম কোনোমতে পরিচালিত হচ্ছে। পাশে আরেকটি দুইতলা ভবন চার বছর আগে সংস্কার করা হলেও নিম্নমানের নির্মাণের কারণে ভবনের অনেকাংশ ধসে পড়ে। বর্তমানে ভবনটির উপরের তলায় ক্লাস নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা বন্ধ রয়েছে। তবে শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় নিচতলার তিনটি কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে।
দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মারজান আক্তার জানান, “বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের এসব কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বেঞ্চ সংকট থাকায় গাদাগাদি করে বসতে হয়, ফলে মনোযোগ দিয়ে পড়া সম্ভব হয় না। মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে খেলাধুলাও করা যায় না।”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পাপিয়া আক্তার খাতুন বলেন, “শ্রেণিকক্ষের সংকটের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নেই গভীর নলকূপ, রয়েছে আয়রনযুক্ত পানি সরবরাহের টিউবওয়েল, ওয়াশরুমের সমস্যাও প্রকট। পেছনের দিকের প্রাচীর ভেঙে গেছে। হলরুম না থাকায় জাতীয় দিবসগুলোয় সব শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারে না। মাঠটি নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই কাদায় ভরে যায়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাদামাটি পেরিয়ে ক্লাসে আসতে বাধ্য হন।”
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যা সম্পর্কে আমি অবগত। বিষয়টি সরজমিনে পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ১৯ জন শিক্ষক ও স্থানীয় সচেতন মহল অবকাঠামো উন্নয়নসহ সকল সমস্যার দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।