নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নেত্রকোণার মদনে জান্নাতুল আক্তার নামে এক নারী তার স্বামী আনসার ব্যাটালিয়নের সৈনিক মোমেন মিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত মোমেন মিয়া ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার এজিবি ক্যাম্পে কর্মরত। তিনি মদন উপজেলার কেশজানী গ্রামের হালান মিয়ার ছেলে। অভিযোগকারী জান্নাতুল আক্তার একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেম মিয়ার মেয়ে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জান্নাতুলের প্রথম বিয়ে হয়েছিল রংপুরের সোহাগ মিয়ার সঙ্গে, এবং সে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু কেশজানী গ্রামে মোমেন মিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে ফোনে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। জান্নাতুলের অভিযোগ, এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাকে ধর্ষণ করেন মোমেন মিয়া। একপর্যায়ে জান্নাতুলের প্রথম স্বামী বিষয়টি জেনে যাওয়ায় দাম্পত্য কলহে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
এরপর জান্নাতুলের মা ঝর্ণা আক্তার আনসার ব্যাটালিয়নের সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি নজরে আসে। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে মোমেন জান্নাতুলকে বিয়ে করেন। তবে মাত্র ২-৩ দিন সংসার করার পর থেকেই পারিবারিক কলহ শুরু হয়। অভিযোগে বলা হয়, মোমেনের বোন হারুনা, মা পারুলা এবং ভাই মামুন মিলে জান্নাতুলকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এমনকি তার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেন পরিবারের সদস্যরা। রাতে তাকে একা ফেলে রেখে অন্যরা অন্যত্র চলে যেত বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
জান্নাতুলের অভিযোগ, মোমেন মিয়া তাকে তালাক দিয়েছেন বলে লোকমুখে প্রচার চালাচ্ছেন, যদিও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তালাকনামা এখনও প্রদান করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন।
জান্নাতুলের মা ঝর্ণা আক্তার বলেন, “মেয়ের প্রথম সংসার ভালো চলছিল। কিন্তু মোমেন ফুসলিয়ে আমার মেয়েকে নানা প্রলোভনে ফেলে। পরে বিয়ে করে ঘরে তুললেও এখন মারধর ও অবহেলার শিকার বানিয়েছে। আমরা সুবিচার চাই।”
অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার মোমেনের গ্রামের বাড়িতে গেলে তার ভাই মামুন বলেন, “আমার জানা মতে, মোমেন তাকে তালাক দিয়েছে।” তবে নির্যাতনের বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আনসার সদস্য মোমেন মিয়া মুঠোফোনে জানান, “জান্নাতুলের আগে একাধিক বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর তাকে ভাড়া বাসায় রাখা হয়েছিল, কিন্তু সে ৩-৪ দিনের জন্য অন্য কারও সঙ্গে চলে যায়। এরপর পারিবারিক অশান্তির কারণে তাকে তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।”
এ ব্যাপারে মদন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”