পূর্বধলায় অধ্যক্ষের ‘একদিনের অধ্যায়'

আসলেন, দেখলেন, চলে গেলেন। মাঝখানে নতুন কর্মস্থলে প্রথম যোগদান উপলক্ষে ক্ষুদ্র পরিসরে নিলেন ফুলেল শুভেচ্ছা। পরে কিছুক্ষণ আলাপ। তারপর বিদায় সংবর্ধনার মাধ্যমে অবসরে গেলেন। বসতে পারেননি নিজের চেয়ারেই।
বলছিলাম নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা সরকারি কলেজে ক্ষণিকের জন্য আসা একদিনের প্রিন্সিপাল মো: বাহারুল ইসলামের কথা। তিনি আজ মঙ্গলবার পূর্বধলা সরকারি কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে ১ম যোগদান করেন। সেই সাথে আজকেই তার কর্মজীবনের শেষ দিবস হওয়ায় তিনি অবসরে গেলেন।
এ উপলক্ষে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে কলেজের উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন কলেজে কর্মরত উপাধ্যক্ষ, সহযোগী অধ্যাপক, প্রভাষক ও কর্মচারীবৃন্দ।
এর আগে তাকে কলেজের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। তবে কলেজের এতদিন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এবং এই দিনের উপাধ্যক্ষ মো: আনোয়ারোল হক অধ্যক্ষের আসনেই বসেছিলেন। নতুন যোগদানকারী প্রিন্সিপালের জন্য অতিরিক্ত একটি চেয়ার উপাধ্যক্ষের চেয়ারের পাশে রেখে তাকে সেখানে বসতে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপাধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক জানিয়েছেন মুলত প্রোগ্রামটি উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ে আয়োজন করায় এমনটি হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেছেন, যেখানে আলোচনা হয়েছে বর্তমানে সেটিই মুলত অধ্যক্ষের কার্যালয়। উপরে অধ্যক্ষের অনার বোর্ডও তাই সাক্ষী দেয়। অধ্যক্ষের নির্ধারিত আসনে বসতে না দেওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন।
কিন্তু এসব বিষয়ের তোয়াক্কা না করেই একদিনের প্রিন্সিপাল মো: বাহারুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, আমার কর্মজীবনের শেষ দিন হওয়ায় এখানে যোগদান করে না থাকতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করছি।
সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি ৩১ বছর ৫মাস চাকুরী করেছি। শিক্ষকতা জীবনে আমি একদিন বাদে বাকী কোনো দিন ক্লাস মিস করিনি। বাবার অসুস্থতার জন্য একটি দিন আমি ক্লাস করাতে পারনি বলে, সে বিষয়টি আমাকে এখনো পীড়া দেয়। আপনারা নিয়মিত যথা সময়ে উপস্থিত হয়ে ক্লাস করাবেন আর শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন বলে এই প্রত্যাশা রাখছি।
উল্লেখ্য পূর্বধলা ডিগ্রী কলেজটি ১৯৬৯সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সিরাজুল ইসলাম।
পরবর্তীতে কলেজটি ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সরকারি করনের আদেশ প্রাপ্ত হয়। তারপর ২০২৩ সালে কলেজটি আত্মীকরণ করা হলেও ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট থেকেই উপাধ্যক্ষ মো: আনোয়ারোল হক কলেজটির ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
পরে চলতি মাসের ৮ তারিখ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে আনন্দমোহন সরকারী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো: বাহারুল ইসলামকে পূর্বধলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়।
এমন খবরে এলাকাবাসীর মাঝে খুশী বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অনেককেই অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে। কিন্তু একদিনের জন্য যোগদান করা প্রিন্সিপাল মো: বাহারুল ইসলামের কর্মজীবনের শেষ দিন হওয়ায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে তিনি ওইদিনই পিআরএল এ চলে গেছেন।
অধ্যক্ষ মো: বাহারুল ইসলাম ১৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে প্রভাষক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। পরবর্তীতে মুক্তাগাছা সরকারি কলেজ, গৌরীপুর সরকারি কলেজ ও পরে আনন্দমোহন সরকারি কলেজে চাকুরী করে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
তার গ্রামের বাড়ী কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায়। সহধর্মীনি ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে সহযোগি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। সংসার জীবনে তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: