নেত্রকোনা শনিবার, ১২ই এপ্রিল ২০২৫, ২৯শে চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ


একজন আদর্শবান চিকিৎসক হতে চায় রাহুল

ছবিঃ নেত্র ভয়েস
ছবিঃ নেত্র ভয়েস

রাহুল ভূঁইয়া নীল ৩ ভাইবোনের সবার ছোট। তার প্রয়াত বাবা রাহুলকে শৈশব থেকেই ডাক্তার বানানো স্বপ্ন দেখেন। 

রাহুলও এসএসসি পাশ করেই মেডিকেলে পড়ার প্রস্ততি নিতে থাকে। নটরডেমে এইচএসসিতে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হতেই হটাৎ তার বাবা রতন ভূঁইয়া হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। 

তার বাবার মৃত্যুকে মেডিকেলে পড়ার আরো প্রবল ইচ্ছাশক্তি বাড়িয়ে তুলে তাকে। কিন্তু টানাপোড়েন সংসারে বাবার অবর্তমানে মেডিকেলে পড়া তো দুরের কথা এইচএসসিতে দ্বিতীয় বর্ষে (ইয়ার চেঞ্জ) ভর্তি হওয়া নিয়ে ঘোর অন্ধাকার দেখে সে। কোন উপায়ন্তর না দেখে মায়ের কানের দোল বিক্রয় করে নটরডেমে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয় রাহুল।

জিপিএ-৫ সহ আশানুরূপ নম্বর পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। শুরু হয় তার মেডিকেল পড়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। যথারীতি পরীক্ষা দেয় এবং গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে সে রংপুর মেডিকেল ভর্তির চান্স পেয়েছে। 

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের মরহুম রতন ভূঁইয়ার ছেলে রাহুল ভূঁইয়া নীল। তার মা মনি আক্তার একজন গৃহীনি। সে স্থানীয় টিপ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম পাশ করে সান্দিকোনা হলি চাইল্ড কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হয়। 

হলি চাইল্ড কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলে থেকে জেএসসি পাশ করে ভর্তি হয় আঠারবাড়ি এমসি হাইস্কুলে। সেখান থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় নটরডেমে ভর্তি হয়। নটরডেমে পড়া অবস্থায় শিল্পকলা একাডেমী থেকে নৃত্য বিষয়ে ৩ মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। ইতিমধ্যে সে বিটিভির তালিকা ভুক্ত একজন নৃত্য শিল্প। সে বায়োলজিতে ২০২৩ সালে অলিম্পিক জয় করেছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রেরের সাথে যুক্ত থেকে নিয়মিত কাজও করছে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়েও কাজ করে। ইউনাইটেড নেশন ইয়থ এন্ড স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অপ বাংলাদেশ মেম্বার সে। 

রাহুল ভূঁইয়া নীল জানান,ছোটবেলা থেকে বাবা আমাকে ডাক্তার বানাবেন বলতেন। আমি বাবার ইচ্ছা পুরণে এসএসসি পাশ করেই ধীরেধীরে প্রস্ততি নেই। আমাদের টানাপোড়নের সংসার নটরডেমে পড়া ব্যয়বহুল তারপরেও বাবা আমাকে সাহস করেই নটরডেমে ভর্তি করায়। প্রথমবর্ষের পরীক্ষা শেষ হতেই বাবা হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। টানাপোড়ন সংসার এরমধ্যে একমাত্র রোজগারকারী বাবা মারা যাওয়ায় খুবই হতাশ হয়ে পড়ি। 

অবশেষে মায়ের মায়ের কানের দোল বিক্রয় করে পু:রায় ভর্তি হই। আমার আগ্রহ দেখে নিকটাত্মীয়রা এগিয়ে আসেন।

মেডিকেলে কোচিং করা নিয়েও বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম, বোন জামাইয়ের সাহায্য নিয়ে শুরু করি এডমিশন যাত্রা। যথারীতি পড়াশোনা শুরু করি প্রাণপণ চেষ্টা। 

অবশেষে মেডিকেল ভর্তি দেই। উত্তীর্ণ হই। আলহামদুলিল্লাহ! মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় রংপুর আমার তৃতীয় চয়েস ছিল। আমার প্রয়াত বাবার ইচ্ছা পূরণ করে একজন ন্যায় ও আদর্শবান চিকিৎসক যাতে হতে পারি সবার কাছে দোয়া চাই। আর আমার এ সফলতার পেচনের কারিগর হলেন গর্ভধারিণী মা,ভাই,দুলাভাই,মামা ও কাকা। তাদের জন্যে দোয়া চাই। তারা আমার পাশে আছেন বলেই আমি এগিয়ে যাচ্ছি।  

ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়ায় মা মনি আক্তার খুবই খুশি। তবে টানাটানি সংসারে ছেলেকে ডাক্তারি পড়ার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগছেন তার মা। ছেলের সফলতার জন্য সবার কাছে দোয়া ছেয়েছেন তিনি। রাহুল মেডিকেল ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় সংবর্ধনা জানিয়েছে তার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলি চাইল্ড কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুল। রাহুল ও তার মায়ের হাতে শুভেচ্ছা স্বারক তুলে দেন কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদার ও হলি চাইল্ড কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলের পরিচালক ইলিয়াস কাঞ্চন সুজন।



বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: