কেন্দুয়ায় পল্লীবিদ্যুতের ৬ হাজার গ্রাহকের মিটার নষ্ট : সীমাহীন দুর্ভোগে গ্রাহক

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের মিটার সংকটে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে গ্রাহকেরা। নষ্ট মিটারের কারণে হাজার হাজার গ্রাহকের উপর এখন মরার খাড়ার ঘা। মিটার রিডারা ওই নষ্ট মিটারের মনগড়া রিডিং রিপোর্ট করে গ্রাহকের ওপর অস্বাভাবিক বিদ্যুতের বিল চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের সহজসরল গ্রাহকেরা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এনিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকরা এসে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বাড়তি বিদ্যুৎ বিল হাওয়ায় কথার কাটাকাটিতেও জড়াচ্ছেন।
এদিকে গ্রাহক গেলেই অফিসে কর্তা ব্যক্তিরা সমস্যা ও কি কি ব্যবহার করেন জানিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন। এরপর গ্রাহকের তথ্যানুযায়ী গড় বিল করা হয়। আর এভাবেই মাসের পর মাস গড় বিলের জালে আটকে কেন্দুয়া উপজেলার গ্রাহকের পকেট কাটছে নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এছাড়াও নতুন সংযোগের শত শত আবেদন জমা পড়ে থাকলেও মিটার সংকটে সংযোগ দিতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ। মাসে পর মাস কেন্দুয়া উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের ওপর এমন নৈরাজ্য পরিস্থিতি চলতে থাকলেও কোন মাথাব্যথা নেই নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতৃপক্ষের।
নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেন্দুয়া জোনাল অফিস সুত্রে জানা গেছে আবাসিক,সেচ ও শিল্প মিলে প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এক বছর থেকে মিটার সংকট দেখা দেয়। দিন দিন এর চাহিদা বাড়তে থাকে। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী মিটারের সরবরাহ না থাকায় নতুন সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি নষ্ট মিটার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৬ সহাস্রাধিক মিটার নষ্ট রয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন যা সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে জরুরী, যেমন সেচ ও শিল্প গ্রাহকের মিটার পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক নতুন সংযোগের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে গ্রাহকরা কিন্তু মিটার সংকটে সংযোগ পাচ্ছেন না।
এনিয়ে একাধিক গ্রাহকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। গন্ডা গ্রামের শফিকুল ইসলাম জনি জানান,তাদের মিটারটা ৮/৯ মাস ধরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগে বিল আসতো ৪/৫ শত টাকা। যখন থেকে খারাপ হইছে তখন বিল আসে ১২/১৪শত টাকা। অফিসে যোগাযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। ফতেপুর গ্রামের আব্দুল কাদির নামে এক গ্রাহক বলেন, তার মিটারে রিডিং ভাসে তে ভাসে না এই অবস্থা মনগড়া রিডিং করা হয়। অন্যবারের বেশি বিল আসায় অফিসে যান। পরে আবেদন করতে বললে আবেদন করি। গড় বিল করবে বলছে তারা। অফিসে মিটার নাই। দ্বিগর গ্রামের শিক্ষক আলমগির হোসেন জানায়,তিনি এখন পরিবারসহ সিলেটে বসবাস করেন। বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন না, এরপরেও প্রতি মাসে ৪/৫ শত টাকা করে বিল আসে।
জহিরুল ইসলাম বেলাল নামে একজন বলেন,তার মিটারে প্রায় দেড়বছর ধরে সমস্যা। অফিসে ঘুরতে ঘুরতে জানডা শেষ। অফিসে গেলে তারা কয় মিটার নাই, আসলে বদলায়ে দেবে। এখন তাদের ইচ্ছামত বিল করে। বাধ্য হয়ে বিল পরিশোধ করি। হানিফ চৌধুরী নামে এক গ্রাহক বলেন, তিনি দুইটি মিটার ব্যবহার করেন। দুইটি মিটারই একই সমস্যা। অফিসে গেলে তারা তালবাহানা করে। আগের চেয়ে এখন দ্বিগুণ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তরুণ মিয়া নামে আরেক গ্রাহক জানান,আগে বিল আসতো ২০০/২৫০ টাকা। এখন এই মাসে ৪ হাজার ৭০০ টাকা বিল আসছে। একবার তার নামে ১৩ হাজার টাকা বিল করা হয়ে ছিল। পল্লী বিদ্যুতের খামখেয়ালিতে অতিষ্ঠ তিনি। গ্রাহক শিরিশ বিশ্বশর্মা জানান,জীবিকার তাগিদে তিন মাস ধরে তিনি স্বপরিবার নিয়ে অন্য এলাকায় বসবাস করেন এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন না। অতচয় তার নামে চলতি মাসে ৮০০ টাকা বিল করা হয়েছে। অফিসে গেলে আবেদন করার কথা বলায় আবেদন করেছি। আগামী মাস থেকে মিনিমাম বিল করবে বলেছে। আমি গরিব মানুষ এই ৮০০ টাকা কই পাবো! কেন আমাদেরকে এই হয়রানির মধ্যে পালাইছে এরা (তারা)।
এপ্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী শাহ আলী তৌফিক রিপর জানান, প্রতিদিনই অন্তত ২০/২৫ জনের ফোন পাই। কারোর মিটার সমস্যা,কারো বিল বেশি আসছে। এসব ফোন শুনতে আর ভাল লাগে না। মিটারের সংকট সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপরে কথা হয় নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেন্দুয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে। গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান,আমি নতুন এসেছি। প্রায় ৭ হাজারের মতো গ্রাহকের মিটার নষ্ট ছিল। গত ১ বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে মিটার সংকট দেখা দেয়। চাহিদামত মিটার সরবরাহ না থাকায় সংকট বাড়তে থাকে। জরুরি বুঝে যেমন সেচ ও শিল্প গ্রাহকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে প্রায় হাজার খানেক মিটার পরিবর্তন করা হয়েছে। এখনো ৬ হাজার গ্রাহকের মিটার নষ্ট। এগুলোর মধ্যে আবাসিক বেশি। এরমধ্যে নতুন সংযোগে চাপ বাড়ছে। ৫০০ মতো নতুন গ্রাহক তাদের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন কিন্তু মিটারের কারণে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত গ্রাহকের অভিযোগ মোকাবিলা করেই চলতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকলে আমাদের কি করার থাকে!
বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তবে আশা করছি এই পরিস্থিতি খুব শিঘ্রই অবসান ঘটবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: