হাজংদের জীবনমান উন্নয়নে যুবক ছুটেছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তর
নেত্রকোনার কলমাকান্দা সীমান্তবর্তী এলাকার সমতল ভূমিতে বসবাস আদিবাসী ও হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের। একসময় দাপটের সঙ্গে বসবাস করেছে ওই সম্প্রদায়ের মানুষ। শুধু তাই নয়, ঐতিহাসিক হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলনের নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তারা।
তবে বর্তমান সময়ে হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান অনেকটা পিছিয়ে আছে। সেইসঙ্গে বিলুপ্তপ্রায় হাজংদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের বাংলা ভাষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আছে অন্তত ৪০টির।
বাংলাদেশে বসবাসরত এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের কাছেও তাদের ভাষা সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নেত্রকোনার যুবক অন্তর হাজং।
তিনি সীমান্তের গ্রামগুলোতে গিয়ে নিজ গোত্রে বিভিন্ন বয়সিদের হাজং ভাষা শেখাচ্ছেন। সেইসঙ্গে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন। শুধু নেত্রকোনা নয়, হাজং ভাষা রক্ষায় অন্তর ছুটছেন শেরপুর ও সুনামগঞ্জ জেলার শতাধিক গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর হাজং নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার রহিন্দ্র হাজংয়ের ছেলে। গত পাঁচ বছর ধরে হাজংদের জীবনমান উন্নয়ন ও ভাষা রক্ষায় কাজ করছেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে কলমাকান্দার সীমান্তের পাঁচগাও গ্রামের একটি বাড়িতে হাজং সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন।
এসময় তিনি হাজং সম্প্রদায় মানুষদের জীবনমান ও ভাষা রক্ষার কথা বলেন। দেখা গেছে, ওই সম্প্রদায়ের ছেলে, মেয়ে, গৃহিণী থেকে বিভিন্ন বয়সি ২৫ থেকে ৩০ জন বাড়ির উঠানে বসে হাজং ভাষা চর্চা করছেন।
কখনো গল্পের ছলে, কখনো কেউ হাজং ভাষায় গীত করছেন, গান করছেন, কেউবা কবিতা পড়ছেন। বাকিরা শুনছেন। শেষে গীত, কবিতা, গান, গল্পে থাকা হাজং ভাষার শব্দগুলো নিয়ে চলছে আলোচনা।
অন্তর হাজং বলেন, মায়ের মুখের ভাষাকেই ভুলতে বসেছেন। বিষয়টি প্রায় পাঁচ বছর আগে অন্তরকে ভাবায়। তাই নিজেদের ভাষা রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। প্রথমে দুর্গাপুরের বগাউড়া, গোপালপুর, ছনগড়া, আড়াপাড়া, বিজয়পুর, লক্ষ্মীপুর, ভবানীপুরসহ সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোতে হাজং ভাষার চর্চা করানো শুরু করেন।
যুবক আরও বলেন, মায়ের মতোই মাতৃভাষাও যে শ্রদ্ধার, বুক দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করি। তারপরও ভাষা হারিয়ে যাওয়ার পথে। একটু সচেতন হলেই বা উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করলেই টিকে থাকবে।
তিনি বলেন, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। হাজং ভাষায় বলা শব্দগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচিত করার মাধ্যমেই চলছে এই ভাষা চর্চা। আমি আমার সাধ্যমতো ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। গবেষণার মাধ্যমে বর্ণ তৈরি করে হাজং ভাষা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ দাবিও করেন তিনি।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: